ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুরে গোসল করতে গিয়ে ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে দুই শিক্ষার্থীর প্রায় ডুবন্ত অবস্থায় দুই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেছে এক সিনিয়র।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় এ ঘটনা ঘটে। উদ্ধারকৃত দুই শিক্ষার্থী হলেন, ফার্মেসী বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শাহজাদা ইসলাম শান্ত ও মাহদী হাসান। এসময় একই বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ তাদেরকে টেনে পাড়ে নিয়ে আসেন।পরে ভ্যানে করে ক্যাম্পাসের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, সকাল ৯টায় ফুটবল মাঠে ফার্মেসী বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বনাম ২০২৩-২৪ ও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্রিকেট খেলা হয়। খেলা শেষে পুকুরে গোসল করতে নামেন তারা। এসময় একবার পুকুরের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার সময় পুকুরের মাঝখানে গিয়ে প্যানিক অ্যাটাক হয়ে ডুবে যাচ্ছিল শান্ত। একই সাথে দূর্বল হয়ে পড়ে মাহদী। মাহদী শান্তকে টেনে পাড়ের দিকে আনতে গেলে সেও ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়। এরপর একই বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ আব্দুল আলিম পুকুরের মাঝখানে গিয়ে তাদেরকে পাড়ের দিকে নিয়ে আসেন। এরপর শিক্ষার্থীরা ভ্যানে করে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সৌরভ বলেন, আমরা সিনিয়র জুনিয়র মিলে ফুটবল মাঠে প্রায় ৪ ঘন্টার মতো ক্রিকেট খেলেছি। খেলা শেষে সকলে কোল ড্রিংকসহ কলা রুটি খাই। পরে পুকুরে এসে আমি একপাশ থেকে অপর পাশ গিয়ে আবার যথাস্থানে আসি। এসময় ২ জন জুনিয়র ওপারে যাওয়ার জন্য পুকুরে নামে। মাঝখান পার হলে একজন ডুবতে থাকে। তখন অপরজন তাকে বাঁচানোর জন্য ধরতে গেলে তার পা টেনে সেও নিচের দিকে ডুবতে থাকে। এসময় আমরা এপাশ থেকে ফুটবল মারি। কিন্তু তাও বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। এসময় আমি পুনরায় তাদেরকে উদ্ধারের জন্য নেমে পড়ি। পরে ফুটবলের সহায়তায় কষ্ট করে তাদেরকে টেনে ওপর পাশে নিয়ে যাই। তারপর তাদেরকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল চিকিৎসক খুরশিদা জাহান বলেন, তাদেরকে এখানে নিয়ে আসার পর একজন বলছিল যে হাত পা অবশ হয়ে আসছে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তাদের অক্সিজেন, প্রেশার সব চেক করেছি, সবকিছু ঠিক আছে। প্রাথমিকভাবে তাদেরকে স্যালাইন দিয়েছি। এরপর ব্যাথার আর ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছি। এখন তারা শংঙ্কামুক্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম বলেন, আমি শোনার সাথে সাথেই এখানে উপস্থিত হয়েছি। প্রাথমিকভাবে তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আপাতত তাদের অবস্থা ভালো দেখছি। ২ ঘন্টা পর পুনরায় ডাক্তার চেকআপ করার পর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিব। আমরা তাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেকোনো সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত আছি।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই ওই একই পুকুর থেকে আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর লাশ উদ্ধার হয়৷ পরবর্তীতে তার ভিসেরা রিপোর্টে শ্বাসরোধে হত্যার বিষয়টি উঠে আসলে এ ঘটনার বিচার দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। এরপর থেকেই পুকুরের দুপাশের সিঁড়ি জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরবর্তীতে সেই নিষেধাজ্ঞা না মেনেই পুকুরে নামা শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে বর্তমানে মামলাটি সিআইডিতে তদন্তাধীন রয়েছে।