কিশোরগঞ্জ জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আরজত আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঁচজন সহকারী শিক্ষককে পাঠদান থেকে বিরত রাখার অভিযোগ ঘিরে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা তৈরি হয়েছে স্থানীয় শিক্ষাঙ্গনে। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনিক কোনো বৈধ আদেশ ছাড়াই এই শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না। এর ফলে ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের পাসের হার নেমে এসেছে মাত্র ৩৮ শতাংশে, যেখানে গত বছর তা ছিল ৮২ শতাংশ।
ঘটনার পটভূমি
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি বিদ্যালয়ের তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত হন পাঁচজন সহকারী শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরে সীমিত সুযোগ-সুবিধা নিয়েও তারা শ্রদ্ধার সঙ্গে পাঠদান করে আসছিলেন। কিন্তু ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর থেকেই তাদের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, কোনো লিখিত কারণ দর্শানো নোটিশ বা প্রশাসনিক আদেশ ছাড়াই একটি কথিত ‘স্টাফ মিটিং’-এর মাধ্যমে তাদের পাঠদান থেকে বিরত রাখা হয়। এই পদক্ষেপ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রযোজ্য বিধিমালার লঙ্ঘন বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভুক্তভোগী শিক্ষকরা বলছেন:
“আমরা শুধু ন্যায়বিচার চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবাদ করায় আমাদের শাস্তি পেতে হচ্ছে। আমাদের সঙ্গে আচরণ করা হয়েছে অপমানজনকভাবে।”
প্রশাসনিক পদক্ষেপ ও প্রতিক্রিয়া
জেলা শিক্ষা অফিস ও জেলা প্রশাসকের কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিয়েও উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাননি শিক্ষকরা। যদিও এক পর্যায়ে নির্দেশনা জারি করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি যথাযথভাবে দেখার পরামর্শ দেওয়া হয়, প্রধান শিক্ষক আবুবকর ছিদ্দিক সেই নির্দেশনা কার্যকর করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।এছাড়া, দীর্ঘদিনের বকেয়া বেতনও সম্পূর্ণরূপে পরিশোধ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
এসএসসি ফলাফলের অবনতি ও তদন্ত বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মোঃ জোনায়েদ হোসেন ১৬ জুলাই জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন, যেখানে তিনি শিক্ষক সংকট ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলাকে দায়ী করেন ফলাফল বিপর্যয়ের জন্য।
এরই প্রেক্ষিতে ২৫ আগস্ট জেলা শিক্ষা অফিসের গবেষণা কর্মকর্তা এ.কে.এম. নাদিরুজ্জামান বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে দেখতে পান, শিক্ষক সংকট, অনিয়মিত ক্লাস, প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা এবং শিক্ষার্থীদের কম উপস্থিতির মতো একাধিক সমস্যা রয়েছে।
তিনি বলেন: ৫ জন শিক্ষককে পাঠদান থেকে বিরত রাখার বিষয়টি গুরুতর এবং তদন্তের দাবি রাখে।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং সাবেক ছাত্রদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, প্রধান শিক্ষকের সিদ্ধান্ত একটি প্রজন্মের শিক্ষাজীবনকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। তারা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করছেন এবং দাবি মানা না হলে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিরও ঘোষণা দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।