কাজ করেও দীর্ঘ আট মাস বেতন না পাওয়া এবং জাহাজের মাস্টারের দুর্ব্যবহার থেকে ধীরে ধীরে দানাবাঁধা ক্ষোভ থেকেই চাঁদপুরের হাইমচরের মেঘনা নদীতে সার বহণকারী এমভি আল বাখেরা জাহাজে সাত জন খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১১। খুনের সাথে জড়িত সন্দেহে আটক করা আকাশ মন্ডল ওরফে ইরফান (২৬) নামে এক যুবককে আটকের পর বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন র্যাব-১১ এর কুমিল্লার উপ অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেন।
এরআগে, সন্দেহভাজন ইরফানকে বাগেরহাট জেলার চিতলমারি এলাকা থেকে আটক করা হয়। আটক হওয়া ইরফানের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, আটককৃত ইরফান বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট এলাকার জগদীশ মন্ডলের ছেলে।
র্যাব আরও জানায়, ইরফান জাহাজটিতে সবার জন্য বাজার করার কাজ করতো। গত ৮ মাস ধরে মাস্টার তাকে বেতন দিতো না। এছাড়া, সব সময় খারাপ ব্যবহার করতো। এসব মিলে তার ভেতর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আর সে ক্ষোভ থেকেই জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়াকে হত্যা করে ইরফান।
ইরফানের ভাষ্যমতে র্যাব জানায়, মাস্টার গোলাম কিবরিয়াকে হত্যা করারই তার মুল টার্গেট ছিল। কিন্তু কিবরীয়াকে হত্যার সময় একে একে যারাই দেখে ফেলে ইরফান সবাইকেই হত্যা করে।
খুন হওয়া ব্যক্তিরা হলেন – মাস্টার গোলাম কিবরিয়া, গ্রিজার সজিবুল ইসলাম, লস্কর মাজেদুল ইসলাম, শেখ সবুজ, আমিনুর মুন্সি, ইঞ্জিন চালক সালাহউদ্দিন, ও বাবুর্চি রানা কাজি। আর আহত সুকানি জুয়েল।
র্যাব জানায়, এরআগে ইরফান জাহাজের প্রতিদিনের বাজার করতে পাবনার একটি বাজারে নেমে যায় এবং সেখান থেকে অন্যান্য জিনিসের সাথে তিন পাতা ঘুমের ওষুধ কিনেন। পরে খাবারের সাথে ওষুধ মিশিয়ে সবাইকে খাওয়ান। পরে জাহাজের নিরাপত্তায় জাহাজে আগে থেকেই রাখা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে সবাইকে হত্যা করে। সবার মৃত্যু নিশ্চিত করে জাহাজ চালিয়ে চাঁদপুরের হাইমচর এসে অন্য একটি ট্রলারে করে পালিয়ে যায়।
আটকের সময় তার কাছ থেকে একটি হ্যান্ডপ্লাভস, ব্যাগ, ঘুমের ওষুধের তিন পাতা খালি পাতা, খুন হওয়া ব্যক্তিদের পাঁচটি মোবাইল সেটসহ মোট সাতটি মোবাইল সেট এবং রক্তমাখা জিন্স প্যান্ট উদ্ধার করা হয়।
এরআগে, সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর ইশানবালা খালের মুখে নোঙর করা সার বহণকারী এমভি আল বাখেরা জাহাজ থেকে পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করে। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও দুজন মারা যায়। নিহতদের সকলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের দাঁগ এবং গলা কাটা ছিল।