শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন

পদ্মা সেতুর প্রভাবে ভাঙন ঝুঁকিতে লৌহজং ও টঙ্গিবাড়ী; ভাঙনরোধে দাবি ৪৯ কোটি টাকা

লিটন মাহমুদ, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২৯ Time View

পদ্মা নদীর অস্বাভাবিক মরফোলজিক্যাল (রূপগত) পরিবর্তনে তীব্র ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে পদ্মা সেতুর ভাটি এলাকা। সেতুর ‘সাইড ইফেক্টে’ নদীর মাদারীপুর-মুন্সীগঞ্জ অংশের কিছু জায়গা হঠাৎ তিন কিলোমিটার চওড়া হয়ে গেছে। নদীর স্রোত পদ্মা সেতুর নদী-শাসন এলাকায় ধাক্কা খেয়ে মূলত তৈরি হয়েছে এ ভাঙন ঝুঁকি।

মাদারীপুর-মুন্সীগঞ্জের কয়েকটি উপজেলার মানুষের সুরক্ষায় দ্রুত সময়ের মধ্যে এ এলাকা সংস্কারের চলমান প্রকল্পের আওতায় আরও ৪৯ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে জানায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো)। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ পরিকল্পনা কমিশনে একটা প্রস্তাবও পাঠিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাপাউবোর পক্ষ থেকে ২০২৪ সালে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সরে-জমিনে যাচাই করে দেখতে পায়, পদ্মা নদীর বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এ স্থানে নকশা সংশোধন করে কাজ বাস্তবায়ন করা জরুরি। মাদারীপুরের শিবচরে অস্বাভাবিক নদী ভাঙনও পদ্মা সেতুর প্রভাবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। পদ্মা সেতুর কারণে ভাটি এলাকায় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। পদ্মা নদী প্রস্থে বড় হয়ে গেছে তিন কিলোমিটার। পদ্মা সেতু এলাকার অবকাঠামোয় স্রোত আঘাত পেয়ে ভাটি এলাকায় এ সমস্যা দেখা গেছে। মুন্সীগঞ্জ জেলার কিছু উপজেলায় বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। বাপাউবোর প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান ‘পদ্মা বহুমুখী সেতুর ভাটিতে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলাধীন বিভিন্ন স্থানে পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ’ শীর্ষক চলমান প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় জরুরি ভাবে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বাপাউবোর প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কারণে ভাটি এলাকায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। পদ্মা নদী প্রস্থে হয়ে গেছে তিন কিলোমিটার। পদ্মা সেতু এলাকার অবকাঠামোয় স্রোত আঘাত পেয়ে ভাটি এলাকায় এ সমস্যা দেখা গেছে। মুন্সীগঞ্জ জেলার কিছু উপজেলায় বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। সেজন্য দ্রুত সময়ে চলমান প্রকল্পের আওতায় নদী ভাঙন রোধ করতে হবে।’

বাপাউবো জানায়, পদ্মা নদীর অস্বাভাবিক মরফোলজিক্যাল পরিবর্তনের ফলে ভাঙনের পরিপ্রেক্ষিতে বাপাউবোর পক্ষ থেকে ২০২৪ সালে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সরেজমিনে যাচাই করে দেখেছে, পদ্মা নদীর বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ওই স্থানে নকশা সংশোধন করে কাজ বাস্তবায়ন করা জরুরি। সংশোধিত নকশা অনুযায়ী প্রায় ১২০ ঘনমিটার জিও ব্যাগ ও ব্লক ডাম্পিং প্রয়োজন, যা সবশেষ অনুমোদিত প্রকল্পে ছিল মাত্র ৪০-৪৫ ঘনমিটার। ১২০ ঘনমিটার ডাম্পিং ম্যাটেরিয়াল হিসেবে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা, যা পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়া সম্ভব নয়। এমতাবস্থায়, চলমান প্রকল্পের কাজ টেকসই করার লক্ষ্যে ন্যূনতম ২৫-৩০ ঘনমিটার অতিরিক্ত জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের মাধ্যমে চলমান কাজ শক্তিশালী করার সুপারিশ করে কারিগরি কমিটি।

জানা যায়, মূল প্রকল্পটি ৪৪৬ কোটি ১১ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অক্টোবর ২০২১ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৩ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদিত হয়। পরবর্তীসময়ে প্রকল্প ব্যয় ৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৪৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্পের প্রথম সংশোধন অনুমোদিত হয়। বর্তমানে প্রকল্পের ডিজাইন পরিবর্তন ও কতিপয় ভৌত কাজের ব্যয় হ্রাস-বৃদ্ধির কারণে দ্বিতীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রস্তাবনা আমাদের হাতে এসেছে। প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধন প্রকল্পে মোট ২৬টি প্যাকেজ অন্তর্ভুক্ত করে ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৮টি প্যাকেজের কাজ চলমান।

এছাড়া আটটি নতুন প্যাকেজের প্রস্তাব হয়েছে।- কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান মো. ছায়েদুজ্জামান প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধনে ৪৯ কোটি ৪ লাখ টাকা বা ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৫২৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ও মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। অর্থাৎ প্রকল্পের কাজ সেপ্টেম্বর ২০২৬ মেয়াদে শেষ হবে।

এ পর্যায়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা প্রকল্প সংশোধনের কারণসহ প্রকল্পটির বিস্তারিত বিবরণ পরিকল্পনা কমিশনে পেশ করেন।এছাড়া ২০১৮-২০ অর্থবছরের রেট শিডিউলে কাজ করতে রাজি নন ঠিকাদার। নতুন রেট শিডিউলে প্রায় ১৮ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, বাপাউবোর প্রস্তাবিত প্রকল্প নিয়ে একটা সভা হয়েছে। আমাদের কিছু বিষয় জানার আছে। এর পরেই উপদেষ্টার টেবিলে প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে। কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, ‘প্রকল্পের প্রস্তাবনা আমাদের হাতে এসেছে। আমরা সভাও করেছি। প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধন প্রকল্পে মোট ২৬টি প্যাকেজ অন্তর্ভুক্ত করে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) প্রণয়ন করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৮টি প্যাকেজের কাজ চলমান। এছাড়া আটটি নতুন প্যাকেজের প্রস্তাব হয়েছে।’

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Toroni24 Tv.
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com