মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৬ অপরাহ্ন

কমে গেলো শকুন, বেড়ে গেল মৃত্যুর হার। প্রায় ৫ লাখ মানুষের ঘটে গেল মৃত্যু!

নিজস্ব ডেস্কঃ
  • Update Time : রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪
  • ৭২ Time View

এ যেন এক মিরাকেল! শকুন কমে যাওয়াতেই প্রায় ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে গেলো! ঘটনাটি ঘটে ভারতে। ভারতের গবেষকদের মতে, মানুষের মৃত্যুর হার বাড়ার পিছে শকুনের সংখ্যা কমে যাওয়াকেই দায়ী করছে। প্রায় দুই শতকেরও আগে ভারতে গরুর এক কঠিন রোগ দেখা দেয়। সেই চিকিৎসায় ব্যবহৃত একটি ঔষধের কারণে শকুন গুলো মারা যেতে শুরু করে।

৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে পাঁচ কোটি শকুনের সংখ্যা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসে কেবল ডাইক্লোফেনাক ওষুধের কারণে। গবাদিপশুর জন্য সাশ্রয়ী ব্যথানাশক ওষুধ ডাইক্লোফেনাক, যা শকুনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যেসব শকুন এই ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা গবাদিপশুর মৃতদেহ খেয়েছিল সেসব শকুন কিডনি বিকল হয়ে মারা গেছে।

স্টেট অব ইন্ডিয়ার সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৬ সালে পশুর চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ফলে কিছু এলাকায় শকুনের মৃত্যু কমতে থাকে। তবে শকুনের তিনটি প্রজাতি (সাদা শকুন, ভারতীয় শকুন, লাল মাথার শকুন) সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের জনসংখ্যা ৯১ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। আর শকুন কমে যাওয়ায় দেশটিতে মানুষের মৃত্যুর হারও বেড়েছে বলে জানান গবেষকরা।

এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে ‘আমেরিকান ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশন’ জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে— অনিচ্ছাকৃতভাবে শকুন ধ্বংস হওয়ার ফলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ মারাত্মক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতি বছর প্রায় পাঁচ লাখ লোক মারা গেছেন।

গবেষকরা আরও দেখেন যে এই প্রভাব টা কেবল শহর অঞ্চল জুড়ে বেশি ছিলো। কেননা সেখানে মৃত গবাদী পশু-পাখি ও ময়লার ভাগাড় একটা সাধারণ বিষয় ছিলো।

অনুমান করা হচ্ছে যে, ২০০০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে শকুন ব্যাপক হারে কমে যাওয়ার ফলে সেই সময় প্রতি বছর অতিরিক্ত প্রায় এক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর এই অকাল মৃত্যুর জন্য প্রতি বছর অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এমনটা হয়েছিল মরণব্যাধি রোগ ও ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণে, যা শকুন পরিবেশ থেকে সরিয়ে ফেলত। কিন্তু ব্যাপক হারে শকুন কমে যাওয়ার কারণে পরিবেশ থেকে এসব সরানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। যেমন– সেই সময় শকুন না থাকায় খ্যাপাটে কুকুরের সংখ্যা অনেক বেশি বেড়ে যায়, যা মানুষের মধ্যে জলাতঙ্ক ছড়ায়। সেই সময় জলাতঙ্কের টিকার বিক্রি বাড়লেও তা অপর্যাপ্ত ছিল। শকুনের বিপরীতে বিভিন্ন কুকুর সেই সময় পরিবেশের এসব পচা দেহাবশেষ পরিষ্কার করতে পারেনি। যার ফলে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও রোগজীবাণু পানিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং পানিতে জীবাণুর পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে যায়।

২০১৯ সালের পশু শুমারিতে ভারতে ৫০ কোটিরও বেশি প্রাণী রেকর্ড করা হয়েছে, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। শকুন অত্যন্ত দক্ষ মেথর হওয়ায় কৃষকরা প্রচলিতভাবে গবাদিপশুর মৃতদেহ দ্রুত সরানোয় এদের ওপর নির্ভর করত।

ভারতের গবেষকদের মতে, ভারতে শকুন কমে যাওয়ার বিষয়টি পাখি প্রজাতির মধ্যে রেকর্ড দ্রুততম ছিল। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রী কবুতর বিলুপ্ত হওয়ার পর এটিই সবচেয়ে বড় বিলুপ্তির ঘটনা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Toroni24 Tv.
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com