মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৮ অপরাহ্ন

বিজয়ের ৫৫ বছরে শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা

নোবিপ্রবি প্রতিনিধি
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ১৪ Time View

বিজয়ের ৫৫ বছরে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশ। ডিসেম্বর এলেই দেশব্যাপী মুখে মুখে এবং নানা আয়োজনে বেজে ওঠে বিজয়ের ধ্বনি। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস—বাঙালি জাতিসত্তার আত্মমর্যাদা, বীরত্ব ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। এই বিজয়ের উদযাপন তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করে। লাখো শহীদের রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা আজকের বাংলাদেশকে নতুন স্বপ্ন ও প্রত্যাশার সামনে দাঁড় করিয়েছে। বিজয়ের ৫৫ বছর উপলক্ষে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন আধুনিক, বৈষম্যমুক্ত ও প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যাশার কথা।

ওশানোগ্রাফি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, বিজয়ের ৫৫ বছর পর আমার প্রত্যাশা ,একটি ন্যায়ভিত্তিক,জ্ঞাননির্ভর,গবেষণা এবং প্রযুক্তি দক্ষতা অর্জন ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। প্রথমত,শিক্ষার্থীরা মানসম্মত ও যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রত্যাশা করে।দ্বিতীয়ত,শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় ভাবনা হচ্ছে কর্মসংস্থান। বিজয়ের সুফল তখনই পূর্ণতা পায় ,যখন একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষে মেধা ও দক্ষতার ভিত্তিতে যোগ্য চাকরির সুযোগ পায়।তৃতীয়ত ,আমি চাই দুর্নীতিমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মান এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ২৪ এর বিপ্লবকে ধারণ করে দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়া এবং সমৃদ্ধ ,ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়া।

সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস রিয়া বলেন,
বিজয়ের ৫৫ বছরে দাঁড়িয়ে আমি মনে করি, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের শুধু একটি স্বাধীন ভূখণ্ডই দেয়নি, দিয়েছে মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক ন্যায়ের স্বপ্ন। একজন সামাজকর্মের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি প্রত্যাশা করি—এই দেশ হবে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবিক বাংলাদেশ। যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা সবার জন্য সমানভাবে নিশ্চিত হবে। তরুণ প্রজন্মের সচেতনতা ও দায়িত্বশীল অংশগ্রহণই পারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তব রূপ দিতে। বিজয়ের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা যেন একটি ন্যায়ভিত্তিক ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনে এগিয়ে যাই।

সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান সীমান্ত বলেন, বাঙালির দীর্ঘদিনের শিকল থেকে মুক্তি, নিজস্ব চেতনায় বলিয়ান ও আত্মপরিচয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর বিশেষ দিন ১৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালে ০৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, লাখো শহীদের রক্ত ও মা-বোনদের ইজ্জতের বিনিময় এবং পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে গৌরবময় বিজয়। শোষনমুক্ত একটি স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠনে বিজয় দিবস আমাদের উদ্দীপ্ত করে এবং প্রেরণা জোগায়। আমাদের সকল চেতনার উর্ধ্বে যেন থাকে শহীদদের আত্মত্যাগের স্মৃতি। তারাই আমাদের ভিত্তি, তারাই আমাদের অহংকার এবং জাতির সূর্য সন্তান।

ওশানোগ্রাফি বিভাগের শিক্ষার্থী ময়ূরী খাতুন বলেন, যদিও বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে তুলনামূলকভাবে তরুণ জাতি, তবুও আমরা স্বাধীনতার ৫৫ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছি। মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা। আমি মনে করি, আমাদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে এদেশের মানুষের আর্থিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক বৈষম্য। ১৯৭১–এর পর যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে সেই বৈষম্যকে পুনরায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে, জনগণ তাদের উৎখাত করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি চাই—আর কোনো ধরনের বৈষম্য যেন সৃষ্টি না হয়। নতুন প্রজন্ম ইতোমধ্যে আধিপত্যবাদকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন সময় এসেছে নতুনভাবে ভাবার; নতুন ধারার রাজনীতির মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার। আমরা চাই সংসদে মানুষের স্বার্থের কথা উচ্চারিত হোক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-ভিত্তিক নীতি গঠন হোক। মেধার মূল্যায়ন হোক এবং আমাদের নেতারা দেশের মানুষে প্রতি দায়বদ্ধ থাকুন। It’s time to shape the future — learning from the lessons of our past.

 

ওশানোগ্রাফি বিভাগ শিক্ষার্থী জিহাদুল ইসলাম রাফি বলেন,‌
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। এই অর্জন আমাদেরকে বিশ্ব দরবারে নতুনভাবে পরিচিত করেছে। আমাদের পূর্বপুরুষদের আত্মত্যাগ ও গভীর দেশপ্রেম এখনো আমাদের প্রেরণা জোগায়—যেকোনো ধরনের অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে। আমি প্রত্যাশা করি, আগামী দিনে আমরা যেনো ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে সব ধরনের নিপীড়িত মানুষের পক্ষে অবস্থান নিতে পারি—যেমনটি আমরা ২০২৪ সালে দেখেছি।

রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আল মাহমুদ বলেন, একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর আমরা মুক্তিকামী জনতা দীর্ঘ সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে পাই আমাদের সোনার বাংলাদেশ তবে আমরা যে আশা প্রত্যাশা নিয়ে পিন্ডির জিঞ্জির থেকে বের হয়ে ছিলাম সে প্রত্যাশা আমাদের পূরণ হয়নি। পিন্ডির জিঞ্জির থেকে বের হয়ে আমরা দিল্লির জিঞ্জিবে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছি দীর্ঘ ফ্যাসিবাদি শাসনের পর ২০২৪ এর বিপ্লবী ছাত্রজনতার ক্ষোভের বিস্ফোরণের ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের তখতে তাউস নড়ে যায় এবং পৃথিবীর ইতিহাসের নিকৃষ্ট স্বৈরশাসক খুনি হাসিনা পালিয়ে যায় ভারতে তবে এখনো আমার সোনার বাংলাদেশ ভারতীয় আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত হতে পারেনি। আমার প্রত্যাশা আগামী সরকারের নিকট যাতে তারা সকল খুনি সন্ত্রাসীদের বিচার নিশ্চিত করে এবং আমাদের সামরিক বাহিনিসহ সকল বাহিনিতে ঘাপটি মেরে থাকা ভারতীয় চরদের সমূলে উপড়ে ফেলে যাতে আগামীতে ন্যায় ইনসাফের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।

বিজয়ের ৫৫ বছরে নোবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের বক্তব্যে স্পষ্ট—তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি ন্যায়ভিত্তিক, বৈষম্যহীন ও আধুনিক বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, সুশাসন ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ বাস্তবায়িত হবে। তরুণদের এই সচেতন ভাবনাই আগামীর বাংলাদেশ গঠনের প্রধান শক্তি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 Toroni24 Tv.
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com