মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:১৯ অপরাহ্ন

রাতের অগ্নিকাণ্ডে ছাই হলো ছয় প্রতিষ্ঠানকারখানা–ওয়ার্কশপ পুড়ে ব্যবসায়ীদের কোটি টাকার ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৬১ Time View

মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ছয়টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভস্মীভূত হয়েছে। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে মাওয়া–লৌহজং সড়কের পাশে আগুন লেগে মুহূর্তেই চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে যায় দোকান, কারখানা ও ওয়ার্কশপ। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দাবি, এই অগ্নিকাণ্ডে অন্তত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডে সুমন ঢালীর একটি ফলের দোকান ও চায়ের দোকান, আরিফ ঢালীর সেলুন, একটি প্লাস্টিক কারখানা, একটি লোহার স্ক্র্যাব কারখানা এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী নাসির খানের একটি ওয়ার্কশপ সম্পূর্ণরূপে পুড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা জানান, দোকানের আসবাবপত্র, মেশিন, ফ্রিজ, মালামালসহ সবকিছু মুহূর্তেই আগুনে ভস্মীভূত হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী নাসির খান বলেন, “আমি রাত সাড়ে তিনটার দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখি আমার ওয়ার্কশপ জ্বলছে। কোনো কিছু বাঁচাতে পারিনি। প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত আড়াইটার দিকে কয়েকজন মোটরসাইকেল আরোহী শিমুলিয়া ঘাটের দিকে যাওয়ার সময় আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পান। তারা স্থানীয়দের খবর দিলে দ্রুত লৌহজং ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়।

লৌহজং ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং পরে শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের আরও দুটি ইউনিট সহযোগিতায় যুক্ত হয়। চারটি ইউনিট প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় ভোর সাড়ে চারটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার দেওয়ান আজাদ হোসেন বলেন, লৌহজং ও শ্রীনগরের মোট চারটি ইউনিট একসাথে কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। আগুনের কারণ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কুমারভোগ পুনর্বাসন এলাকার সুমি বেগম (৩৮) ভস্মীভূত দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, “আমার দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। রুজি–রোজগারের সব শেষ। মাত্র ১০–১২ দিন আগে কিস্তিতে নতুন ফ্রিজ কিনেছিলাম, সেটিও পুড়ে গেছে। এখন আমি কোথায় যাব?”

এমনই কান্না আর হতাশায় ভেঙে পড়েছেন অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরাও। জীবিকার একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

ঘটনার পর মঙ্গলবার সকালে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. শহিদুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আপাতত ১৮ পিস ঢেউটিন সহায়তা দেওয়া হবে। তবে ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনায় ভবিষ্যতে আরও সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।

স্থানীয়রা বলছেন, অগ্নিকাণ্ডে সব হারানো ব্যবসায়ীরা এখন চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। অনেকেরই ঋণের টাকা শোধ বাকি ছিল, আবার কেউ সদ্য নতুন ব্যবসা শুরু করেছিলেন। আগুনে পুড়ে যাওয়া দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আহাজারি দেখলে চোখে পানি না এসে উপায় নেই।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 Toroni24 Tv.
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com