সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘিরে এক চাঞ্চল্যকর আর্থিক কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়েছে। প্রায় ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাকিবুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় জনমনে ক্ষোভ ও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগের সূত্রপাত হয় কয়েক বছর আগে। মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকাকালে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, সরকারি অনুদান এবং প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে অর্থ আত্মসাৎ ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। অভিভাবক ও পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্য অভিযোগ করেন— টাকার হিসাব মিলছে না, অথচ রাকিবুল ইসলাম জটিল কৌশলে তা গোপন করেছেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত শুরু করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রমাণিত হয় যে, প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ভর্তি বাণিজ্য, সরকারি প্রকল্পের অর্থ, শিক্ষার্থীদের ফি এবং অনুদানের টাকা যথাযথ খরচ না করে আত্মসাত করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে, ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন রাকিবুল ইসলাম।
বুধবার দুপুরে মামলার অগ্রগতি অনুযায়ী তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে সরাসরি কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালতের এ রায়ে স্কুল ও আশপাশের এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অভিভাবক মহল বলছে— “আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। আমরা দ্রুত টাকা ফেরত ও অভিযুক্তের কঠোর শাস্তি চাই।”
উল্লাপাড়া উপজেলায় এ ধরনের ঘটনার নজির বিরল। তাই সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতৃবৃন্দও ঘটনাটিকে শিক্ষা খাতে বড় ধরনের আঘাত বলে মনে করছেন।
মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুল স্থানীয়ভাবে একটি সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ছিল। দীর্ঘদিন ধরে এখান থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল করে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক এই কেলেঙ্কারি প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, এ ঘটনার ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হতে পারে।
অভিভাবক ও এলাকাবাসীর দাবি— আত্মসাৎকৃত টাকা দ্রুত উদ্ধার করে তা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজে ব্যয় করতে হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন কোনো প্রধান শিক্ষক বা কর্মকর্তা আর এমন অনিয়ম করতে না পারে সে বিষয়ে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।