গ্রামগঞ্জে উন্নয়ন, আত্মকর্মসংস্থান ক্ষুদ্রঋণ ও অধিক মুনাফার স্বপ্ন দেখিয়ে গড়ে ওঠা নামসর্বস্ব এনজিওগুলোর প্রতারণায় নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়ে এসব ভুয়া সংস্থা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা, তারপর রাতারাতি গায়েব হয়ে যাচ্ছে। সাধারন মানুষের কষ্টে অর্জিত টাকা নিয়ে পালানো পর এনজিও মালিকদের খুুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ এসব এনজিওর কার্যক্রমে অনুমোদন ও তদারকির দায়িত্বে থাকা সমবায় কর্মকর্তাদের চরম অবহেলা ও উদাসীনতায় এমন হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বালসাবাড়ি এলাকা থেকে রুপসী বাংলা পল্লি উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামে একটি ভুয়া সংগঠন দুই’শ ষাট জন সদস্যের প্রায় ৬ কোটি নিয়ে উধাও হয়েছে। পরে অফিস কক্ষেও তালা ঝুলতে দেখা গেছে। অনেক চেষ্টা করেও এই সমবায় সমিতির ৬ উদ্যোক্তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না ভুক্তভোগীরা।
এ ঘটনায় ইমতেকার হোসেন রুবেল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ ও ১৮জন ভুক্তভোগী বাদী হয়ে কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন।
জানা গেছে, ১২ বছর আগে রুপসী বাংলা পল্লি উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি গঠন করেন একই এলাকার আমিন , মোস্তাক হাসান, মিনা মালেক ও আব্দুর রহমান। দীর্ঘদিন সমিতি থেকে বিভিন্ন জনকে লোন বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন তারা। গত কয়েক বছর আগে সমিতিকে মৌখিক ভাবে এনজিওতে রুপ দিয়ে গ্রামের সাধারন জনগনকে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়া, এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও অধিক মুনাফায় টাকা এফডিআরের আশ্বাস দেন।
কিছুদিন সঠিক ভাবে লেনদেন পরিচালনার মাধ্যমে সাধারন মানুষের মধ্যে বিশ্বাস অর্জন করেন। এক পর্যায়ে 260 জন সদস্যের ৬ কোটি নিয়ে পালিয়ে যান তারা। এরপর থেকেই রুপসী বাংলা পল্লি উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির অফিস কক্ষে তালা ঝুলছে। এমতাবস্থায় চরম হতাশায় পড়েছেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগী ফিরোজ আহমেদ, মোহাম্মাদ কোরবান , আবু তালেব সহ অনেকে বলেন, তারা আমাদেরকে বলেছিলো এখানে টাকা রাখলে প্রতি লাখে ১২শ টাকা লাভ দেয়া হবে। টাকা রাখার পর কয়েকমাস ঠিকমতো লভ্যাংশও দিয়েছে। এভাবে লেনদেন করতে করতে যখন তাদের সদস্য সংখ্যা বেশী হলো অনেক টাকা জমা হলো তখনই তারা টাকা নিয়ে পালালো। লাইসেন্সকৃত একটি সমিতি টাকা নিয়ে পালালো এতে আমরা হতাশ।
উপজেলা সমবায় অফিস সুত্রে জানা গেছে, বালসাবাড়ি এলাকা থেকে রুপসী বাংলা পল্লি উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি সমবায় অফিস থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত। তারা দীর্ঘদিন যাবত বালসাবাড়িতে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মারুফ হাসান বলেন, বালসাবাড়ি এলাকা থেকে রুপসী বাংলা পল্লি উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতিতে লোকজন এফডিআর করতো তা আমাদের জানা ছিলো না। যদি লোকজন আমাদের জানিয়ে এফডিআর করতেন তাহলে আমরা তাদের নিষেধ করতাম।
তিনি আরো বলেন, বালসাবাড়ি এলাকা থেকে রুপসী বাংলা পল্লি উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির লোকজন পালিয়ে যাওয়ার পর তাড়াশ উপজেলা সমমবায় কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের প্রতিবেদন পেলে সে অনুপাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত ছুটিতে থাকায় এবিষয়ে তার মন্তব্য জানা যায়নি।