রবিবার রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য, মাদকের ভয়াল ছোবল এবং অনলাইন জুয়ার ফাঁদ থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষায় কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থার দাবিতে আজ রবিবার (০৭ ডিসেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এক বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘সচেতন রাঙামাটিবাসী’র ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, সামাজিক সংগঠনের সদস্যসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন। রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি আনোয়ার আল হক-এর সভাপতিত্বে এবং হিল সার্ভিসের দপ্তর সম্পাদক পারভেজ মোশাররফ হোসেন-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা শহরের অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বক্তারা বলেন, একসময় রাঙামাটি পৌর এলাকা শান্ত ও নির্ভেজাল শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে রির্জাভ বাজার, কাঁঠালতলী, পৌরসভা এলাকা, শান্তিনগর, তবলছড়ি ও কলেজ গেইটসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য, মাদক কারবারিদের তৎপরতা ও অনলাইন জুয়ার ভয়াবহতায় কিশোর ও তরুণরা ধ্বংসের মুখে। মাদক বিক্রি, কিশোর গ্যাং, চাঁদাবাজি, র্যাগিং, অনলাইন ক্যাসিনো—এসব অপসংস্কৃতির পেছনে যারা আছে, তাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নিতে হবে। সমাজকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রয়োগ করতেই হবে,বক্তারা জোর দিয়ে বলেন।
অ্যাডভোকেট মোখতার আহমেদ (২৯৯ নং আসনের দাঁড়িপাল্লার এমপি পদপ্রার্থী): তিনি বলেন, “মাদক ও কিশোর গ্যাং কোনো পরিবারকে ছাড়ে না। রাঙামাটিকে রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যারা পাহাড়ে মাদক ছড়াচ্ছে এবং শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করছে, তাদের শেকড় উপড়ে ফেলতে হবে।
সাইফুল ইসলাম শাকিল (রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক): তিনি মাদক ব্যবসা, গ্যাং কালচার ও অনলাইন জুয়াকে ‘নীরব মহামারি’ আখ্যা দিয়ে প্রশাসন, পরিবার ও শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘মাদকমুক্ত রাঙামাটি’ গড়ার শপথ নেওয়ার আহ্বান জানান।আনোয়ার আল হক (সভাপতি): সভাপতির বক্তব্যে তিনি অঙ্গীকার করেন, এই পাহাড়ে কোনো কিশোর গ্যাং ও মাদকের আস্তানা হতে দেব না। মাদক ব্যবসায়ী, গ্যাং লিডার—যেই হোক, তাকে রাঙামাটির মাটিতে জায়গা দেওয়া হবে না।
মানববন্ধন থেকে কিশোর গ্যাং ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে প্রশাসনের প্রতি নিম্নলিখিত জোরালো দাবিগুলো উত্থাপন করা হয়: রাঙামাটি শহরকে নিরাপদ ও ভয়হীন রাখতে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে পুলিশের নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা। ইয়াবা, আইস, গাঁজাসহ সকল মাদকচক্র ধ্বংসে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। তরুণদের জন্য খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও সৃজনশীল সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা। স্কুল-কলেজে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা। মানববন্ধনের শেষে বক্তারা অঙ্গীকার করেন, রাঙামাটিকে আবারও শান্ত, নিরাপদ, কিশোর গ্যাং, সন্ত্রাস ও নেশামুক্ত শহর হিসেবে গড়ে তুলব—এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।
অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি জেলা জামায়াতের আমির আব্দুল আলীম, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাউন্সিলর আবু সাদাৎ সায়েম, রিজার্ভ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য মো: হাবীব আজম, হেফাজতে ইসলামের রাঙামাটি জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবুল হাশেম এবং অন্যান্য সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।