সিরাজগঞ্জ শহরের এক শান্ত বিকেল। পৌর এলাকার একটি হলরুমে বিকেল ৫টা বাজতেই ভিড় জমতে শুরু করে শত শত শ্রমিকের। কারও হাতে হেলমেট, কারও কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ, কারও চোখে দিনভর রোজগারের ক্লান্তি। কিন্তু ক্লান্তি ভেদ করে তাদের চোখে ফুটে উঠছিল নতুন প্রত্যাশা—একটি শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ কমিটির খোঁজে তারা সবাই একত্রিত হয়েছেন।
গত ২১ সেপ্টেম্বর রবিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক দলের এই আলোচনা সভাটি ছিল শুধু একটি রাজনৈতিক আয়োজন নয়, বরং শ্রমিক-নেতাদের প্রাণের মিলনমেলা।
সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মোঃ শামসুল আলম। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও জেলা ড্যাবের সভাপতি ডাঃ এম এ লতিফ। তার ভাষণে তিনি শ্রমিক সমাজকে শক্তিশালী করার ডাক দেন এবং বলেন—“সৎ, যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের দিয়েই কমিটি গড়তে হবে, যারা সুখে-দুঃখে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াবে।”
প্রধান বক্তা হিসেবে মির্জা মোস্তফা জামান ছিলেন যেন পুরো হলরুমের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি বক্তব্যে একধরনের দৃঢ়তা আর আত্মবিশ্বাস ছড়িয়ে দেন। তার কণ্ঠে ভেসে আসে—“আজকের সভা শুধু কমিটি গঠনের জন্য নয়, এটি হলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শপথ গ্রহণের সভা। আপনাদের শক্তিই হলো জেলা শ্রমিক দলের শক্তি, জেলা বিএনপির শক্তি।”
তার ভাষণ যেন শ্রমিকদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা ছড়িয়ে দেয়। তিনি তাদের আহ্বান জানান রাজপথের সৈনিক হয়ে আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা নিতে।
বক্তাদের ভাষণে উঠে আসে শ্রমিকদের নিত্যদিনের দুঃখ-দুর্দশার কথা। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, গণপরিবহন খাতের বিশৃঙ্খলা—সব মিলিয়ে এক অস্থির সময় কাটাচ্ছেন সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকরা।
অনেক শ্রমিক ফিসফিস করে বলছিলেন, “দৈনিক আয় আগের মতো নেই। খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছি। এর মধ্যেও যদি সংগঠনটা শক্ত হয়, তাহলে হয়তো দাবি আদায়ে আমরা একটু বেশি জোর পেতে পারি।”
সভায় শুধু রাজনৈতিক বক্তব্যই হয়নি, শ্রমিকদের মধ্যে ছিল দৃঢ় অঙ্গীকার। নেতাদের ভাষণের সঙ্গে সুর মিলিয়ে শ্রমিকরাও একবাক্যে জানালেন, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তারা যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত।
নেতৃবৃন্দ ঘোষণা দেন, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, মাদকাসক্ত বা সুবিধাবাদীদের কোনো স্থান এই কমিটিতে হবে না। বরং গড়ে তোলা হবে একটি কর্মমুখী ও শক্তিশালী নেতৃত্ব, যারা সত্যিকার অর্থে শ্রমিকদের পাশে থাকবে।
সভার শেষ পর্যায়ে নেতৃবৃন্দ নতুন কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা দেন। উপস্থিত সবার মতামতের ভিত্তিতে শিগগিরই একটি পূর্ণাঙ্গ, কার্যকরী ও ঐক্যবদ্ধ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সন্ধ্যা নামতে শুরু করলে শ্রমিকরা হলরুম থেকে বেরিয়ে আসছিলেন। কারও মুখে ক্লান্তির ছাপ, তবে চোখে ভেসে উঠছিল আশার ঝলক। মনে হচ্ছিল, এই মিলনমেলা তাদের কেবল সংগঠনের শক্তিই দেবে না, বরং ভবিষ্যতের সংগ্রামে লড়াই করার সাহসও জোগাবে।