সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের বাতিয়ারপাড়া গ্রামে গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ভোরে ঋণের বোঝা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন জামাল সরদার (৬০)। বহু বছর ধরে তালগাছি হাটে ছাগল জবাই করে মাংস বিক্রি করে সংসার চালালেও, দিন শেষে ঋণের ফাঁদ থেকে আর মুক্তি মেলেনি তার।
জামাল সরদার ছিলেন পরিশ্রমী মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে ঐতিহ্যবাহী তালগাছি হাটে ছাগল জবাই করে মাংস বিক্রি করতেন। গ্রামের মানুষ তাকে চিনতেন পরিশ্রমী, সৎ ও নির্লোভ ব্যবসায়ী হিসেবে।
ছেলেকে বিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠানোর পর একাই সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন তিনি। তবে পুঁজির অভাব ও বাজারের প্রতিযোগিতায় ক্রমেই দেনায় জড়িয়ে পড়েন। সম্প্রতি ঋণের বোঝা বেড়ে গেলে মানসিক চাপ তাকে ভেঙে ফেলে। ফজরের নামাজের অজু শেষে ঘরে ঢুকে তিনি গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
হঠাৎ এমন মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ তার পরিবার। স্ত্রী বলেন,“প্রতিদিনই দেনার চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠতেন উনি। অনেক সময় ঘুমোতে পারতেন না। আমাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই হয়তো তিনি এই পথ বেছে নিয়েছেন।”
প্রতিবেশী আব্দুল করিম জানান,জামাল ভাই ছিলেন সৎ ব্যবসায়ী। দেনার কারণে তিনি মানসিক কষ্টে ছিলেন এটা আমরা জানতাম। কিন্তু তিনি যে এমন সিদ্ধান্ত নেবেন, তা কেউ ভাবতে পারেনি।
শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আছলাম আলী বলেন,খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে।
স্থানীয় সমাজকর্মী রফিকুল ইসলাম মনে করেন,গ্রামীণ সমাজে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রায়ই ঋণের ফাঁদে পড়ে। সহজ শর্তে ঋণ পেলেও সুদের চাপ ও অপ্রতুল আয়ের কারণে দেনা শোধ করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। এতে পরিবারগুলো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, গ্রামীণ অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সুদমুক্ত বা স্বল্পসুদে ঋণপ্রাপ্তির সুযোগ বৃদ্ধি করা গেলে এ ধরনের পরিস্থিতি অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব।
জামাল সরদারের আত্মহত্যা শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো সমাজের জন্য সতর্কবার্তা। ঋণের চাপ, একাকিত্ব ও মানসিক যন্ত্রণা কীভাবে একজন মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে, এই ঘটনাই তার নির্মম প্রমাণ।