সিরাজগঞ্জের মাঠে এখন শুধু সবুজের রাজত্ব। বাতাসের দোলায় দুলছে ধানের চারা, যেন বিস্তীর্ণ প্রান্তরে প্রকৃতি বিছিয়ে দিয়েছে সবুজের গালিচা। পড়ন্ত বিকেলের আলোয় ধানক্ষেতের দৃশ্য এমনই মনোরম, যা কৃষকের পরিশ্রমের প্রতীক হয়ে ধরা দেয়। গ্রামের ছেলেমেয়েরাও মাঠে গিয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত।
জেলার ৯টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল প্রায় ৭৮ হাজার হেক্টর। তবে কৃষকেরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে চাষ করেছেন। শস্যভান্ডার খ্যাত তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় জুলাইয়ের শুরু থেকে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত কৃষকেরা জমিতে চারা রোপণ করেছেন। এসময় ব্রি ধান-৭১, ৭৫, ৪৯, ১০৩ ছাড়াও দেশীয় জাতের ধান চাষ হয়েছে।
স্থানীয় কৃষক মকবুল হোসেন (তাড়াশ উপজেলা) বলেন,
“গতবার ধান চাষে অনেক খরচ হয়েছিল, কিন্তু ফলন খুব একটা ভালো হয়নি। এ বছর বর্ষায় বারবার বৃষ্টি হওয়ায় জমি সহজেই তৈরি করতে পেরেছি, খরচও কম পড়েছে। এবার যদি ফলন ভালো হয়, তাহলে ঋণের টাকা শোধ করতে পারব।”
উল্লাপাড়ার কৃষক রহিম উদ্দিন জানান,“আমাদের খাল-বিলের জমিতে এবার পানির অবস্থা ভালো ছিল। তাতে ধানের চারা দারুণ বেড়ে উঠেছে। সার আর কীটনাশকে খরচ একটু বেশি হয়েছে, আবার কামলার মজুরিও বেড়েছে। তবুও মনে আশা জাগছে, এবার ধান ঘরে তুলতে পারলে পরিবার নিয়ে ভালো একটা ঈদ কাটাতে পারব।”
কৃষাণী জাহানারা বেগম (রায়গঞ্জ) বলেন,
“ধান কেটে ঘরে তুলতে পারলে আমাদের সংসারের খরচ চালানো সহজ হবে। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ মেটাতে পারব। আমরা তো ধানেই বাঁচি।”
কৃষকের পরিবারের স্বপ্ন, সন্তানের পড়াশোনা, ঋণ শোধ আর আগামী দিনের নিরাপত্তা—সবকিছুই জড়িয়ে আছে এই ধানের সাথে।
সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আ. জা. মু. আহসান শহিদ সরকার বলেন,
“লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে রোপা আমন চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করছেন এবং কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।”
সবুজে মোড়ানো মাঠ কৃষকের চোখে এখন সোনালি স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি। কয়েক সপ্তাহ পরই এই সবুজ ধানক্ষেত সোনালি রঙে রাঙিয়ে উঠবে। আর সেই সোনালি ধানের হাসিই কৃষকের মুখে হাসি ফিরিয়ে আনবে, শোধ হবে ঋণের বোঝা, শিশুদের মুখে ফুটবে স্বপ্নের আলো।