আসছে পবিত্র কোরবানি ঈদ। এই কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জেলা সদরের বিভিন্ন হাটবাজারে থাকা কামারপাড়াগুলোতে কামার শিল্পদের সাথে জড়িতদের
ব্যস্ততা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা আরোও জানান, কোরবানি শব্দটি আরবি (কুরব) ধাতু থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ নৈকট্য বা সান্নিধ্য।
আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে আত্মোৎসর্গ করাই কোরবানি।
শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তার নামে পশু জবেহ করাকে কোরবানি বলে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে আল্লাহর নামে নির্দিষ্ট কিছু হালাল পশু জবাই বা কোরবানি করা হয়। আর এই ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কামার শিল্পীরা।
টুংটাং শব্দই বলছে ঈদ লেগেছে কামারপাড়ায় । দিন রাত চলছে চাপাতি, দা, বটি, ছুরি তৈরি ও শানের কাজ। ঈদের দিন যতো ঘনিয়ে আসছে ততোই ব্যস্ততা বাড়ছে কামারদের। জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাটবাজার ঘুরে
দেখা গেছে, কামারপাড়া গুলোতে কামারদের ব্যস্ততা বাড়তে শুরু করেছে। আরদু” একদিন পর পুরোপুরি তারা ব্যস্ত হয়ে উঠবে। এখন থেকেই মানুষ দা, বটি দাঁড়ানোর জন্য নিয়ে আসতে শুরু করেছে। লাল আগুনের লোহায় কামারদের পিটাপিটিতে মুখর হয়ে উঠেছে কামার দোকানগুলো।
টুংটাং শব্দটি এখন তাদের জন্য এক প্রকার ছন্দ। জানা যায়, শহরের বিভিন্ন দোকান থেকে লোহা
কিনে সেগুলো আগুনে পুড়িয়ে দা, বটি, চাকু, চাপাতিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করছেন কামাররা। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও
ঈদুল আজাহাকে সামনে রেখে জমে উঠে তাদের এই হস্তশিল্প।
কামার শিল্পী নিতই দাস বলেন, সারা বছর এই কোনবানির ঈদের জন্য অপেক্ষায় থাকি। এ সময়টিতে যারা কোরবানির পশু জবাই করেন তারা প্রত্যেকে চাপাতি, দা, বটি, ছুরি তৈরি করেন।
বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এ সময়টিতে কাজ বেশি হওয়ার কারণে লাভও বেশি হয়। তবে লোহা আর কয়লার দাম বেশি থাকায় মজুরিও একটু বেশি নিতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমাদের পরিচিত কিছু গ্রাহক দা, বটি, ছুরি বানানোর অর্ডার দিয়ে গেছে এবং শাণ দেয়ার অর্ডার পেয়েছি।
পাশাপাশি নতুন বটি, ছুরি তৈরি করছি। বিশেষ করে কোরবানির ২-৩ দিন আগে গ্রাহকের আনাগোনা আরও বেড়ে যাবে বলেও জানান তিনি। কামার শিল্পী হরিকান্ত
মল্লিক বলেন, সব কিছুর দাম বাড়লে আমাদের পারিশ্রমিক
বাড়েনি। সারাবছর টুকটাক কাজ হয়। ঈদের সময়টাতে যা আয় হয় তা দিয়েই সারাবছরের হিসেব মিলিয়ে চলতে হয়। তিনি আরোও জানান, বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতেই মূলত কিছু কামার এখনো এ পেশায় জড়িয়ে আছেন। এছাড়া পরিশ্রমের তুলনায় এ পেশায় সাধারণত আয় ও সম্মান উভয়ই কম।
তাই অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। এই ঈদের সময়টাতে কাজ করলে বাড়তি আয় করা যাচ্ছে। তাই সকল কামার শিল্পীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে জানিয়েছেন
তিনি।