অনেক ঢাক ঢোল পিটিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে দুদকের গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়। শুনানীতে উত্থাপিত অভিযোগ সমুহ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেয়া হলেও এখন “হচ্ছে হবে” বলে দায় এড়াতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ।
‘রুখবো দুর্নীতি, গড়বো দেশ, হবে সোনার বাংলাদেশ’ এই স্লোাগানকে সামনে রেখে ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সেবা পেতে হয়রানি, ঘুষ-দুর্নীতির শিকার সেবাপ্রত্যাশী জনসাধারণ এবং সেবাপ্রদানকারী বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের অংশগ্রহণে গত ০৩ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানি করা হয়।জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমানের পরিচালনায় গণশুনানিতে সদর উপজেলার ৩৪টি সরকারি দপ্তরের অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষসহ মোট ৬০টি অভিযোগ করা হয়। গণশুনানীতে ঠাকুরগাও রোড প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শ্যামলী আক্তার তার অভিযোগে জেলার প্রভাবশালী মহল কর্তৃক রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বিভিন্ন সরকারি সম্পত্তি দখল করে ভোগ করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন সদর উপজেলার ঠাকুরগাঁও রোড এলাকায় ঠাকুরগাঁও পৌরসভার আওতায় পরিচালিত ঐতিহ্যবাহী রোড বাজার। দিনের পর দিন স্থানীয় প্রভাশালীরা দখলে নিয়ে নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করছেন এই বাজারটি। নিয়মনীতির তোয়াাক্কা না করে তারা বাজারটিতে গড়ে তুলেছে একের পর এক বহুতল আবাসিক ভবন। ১৫ বছর আগেও বাজারটি ৫ লাখ টাকায় ইজারা দেয়া হয়েছিল। দখলের কারণে বাজারটির স্থান সংকুচিত হয়ে আসতে থাকায় গেল বছর মাত্র ৭০ হাজার টাকায় ইজারা দেয়া হয়। তিনি তার অভিযোগে আরও বলেন একাধিকবার পৌর মেয়রকে বিষয়টি সম্পর্কে লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন আগামী ১০ দিনের মধ্যে দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বেদখল হওয়া হাটের জমি উদ্ধারের জন্য জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেন। উক্ত গণশুনানী শেষ হওয়ার পর তিন মাস অতিক্রান্ত হতে চললেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই হাটের জমি উদ্ধারের। এব্যাপারে দুদক ঠাকুরগঁাও দপ্তরের উপপরিচালক তাহসীন মুনাবিল এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান “ফাইলটি আমরা জেলাপ্রশাসক দপ্তরে পাঠিয়েছি, তিনি সেটা আর ডি সি দপ্তরে পাঠিয়েছেন”। এ সংবাদদাতা আর ডি সি দপ্তরে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে জানানো হয় “ আমরা কোন ফাইল পাইনি”।
ঠাকুরগাঁও জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের আয়োজনে এ গণশুনানীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন- দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন, রংপুর বিভাগের পরিচালক মো. তালেবুর রহমান, ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক, দুর্নীতি দমন কমিশনের ঠাকুরগাঁও সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হকসহ জেলার সব সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ।
ঘটা করে গণশুনানীর আয়োজন করে অভিযোগ নিয়ে পরবর্তীতে অভিযোগ সুরাহার কোন ব্যবস্থা না গ্রহণ করে লুকোচুরি খেলার এমন আয়োজনে বিস্মিত সচেতন মহল। তারা অবিলম্বে ঠাকুরগঁাও রোড বাজারের বেদখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।