বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নতুন সভাপতি হয়েছে মুন্সীগঞ্জের ফারুক আহমেদ। তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার আব্দুল্লাহপুরের সন্তান।
এর মধ্যে দিয়ে নাজমুল হাসানের এক যুগের রাজত্বের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হলো। বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব থেকে থেকে পদত্যাগ করলেন তিনি। নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে বিসিবির জরুরী বৈঠক শুরুর একটু পর জানা যায় নাজমুল হাসানের পদত্যাগের খবর। বিসিবির সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী সভাপতি ছিলেন তিনি।
নতুন সভাপতি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়াও দ্রুতই সেরে ফেলা হয়। বিসিবির ১৫তম সভাপতি ফারুক। এই প্রথম কোনো সাবেক ক্রিকেটার বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব পেলেন।
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই লাপাত্তা নাজমুল। প্রবল দাপুটে বোর্ড সভাপতিকে আর দেখা যায়নি বিসিবিতে। পরিবারসহ তিনি লন্ডনে চলে গেছেন বলে গুঞ্জন আছে ক্রিকেট আঙিনায়।
২০১২ সালের অক্টোবরে সরকারের মনোনয়নে প্রথমবার বিসিবি সভাপতি হন নাজমুল হাসান। তখনকার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বোর্ড সভাপতিকে নিয়োগ দিত সরকার। বিসিবির ১৪তম সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি।
পরে আইসিসির নির্দেশনা অনুযায়ী গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচনের ধারা রাখা হয়। বিসিবির প্রথম নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে তার মেয়াদ শুরু হয় ২০১৩ সালে। যদিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি। পরে সেই ধারাই চলতে তাকে। ২০১৭ ও ২০২১ সালের বিসিবি নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
তার মেয়াদের প্রথম কয়েক বছরে মাঠের ক্রিকেটে বেশ কিছু স্মরণীয় সাফল্য এসেছে। ফিক্সিং কেলেঙ্কারিকে পেছনে ফেলে বিপিএলকে নতুন করে চালু করে তার বোর্ড। তবে যত সময় গড়াতে থাকে, নানা বিতর্কও ছড়াতে থাকেন তিনি ও তার নেতৃত্বাধীন বোর্ড। আর্থিক অনিয়ম, ক্রিকেট প্রশাসনে অস্বচ্ছতা, বোর্ডের ভেতরে নানা ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট গড়ে তোলা, অবকাঠামোর প্রত্যাশিত উন্নতি করতে না পারা, ঘরোয়া ক্রিকেটে মাঠের খেলা বিতর্কিত করাসহ কাঠামো ধ্বংস করা, এরকম অসংখ্য অভিযোগ বছরের পর বছর ধরে ছিল নাজমুলের বোর্ডের বিরুদ্ধে।
শেখ হাসিনা সরকারে পতনের পর নাজমুলের মতো গা ঢাকা দিয়েছেন তার অতি ঘনিষ্ঠ সহযোগী বোর্ড পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিকসহ আরও বেশ কজন বোর্ড পরিচালক। দেশে থাকা পরিচালকদের মধ্যে পদত্যাগ করেছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোটায় বোর্ডে আসা পরিচালক জালাল ইউনুস। এই কোটার আরেক পরিচালক, দীর্ঘদিনের সংগঠন আহমেদ সাজ্জাদুল আলমকেও পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। তবে তিনি পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন আগেই।
জালাল ইউনুসের শূন্য পদেই পরিচালক হিসেব মনোনয়ন দিয়ে পরে সভাপতি করা হয়েছে ফারুক আহমেদকে। সাবেক এই ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন প্রায় ১৫ বছর ধরে। ১৯৯৩ আইসিসি ট্রফিতে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন তিনি সাতটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। সবশেষ দেশের জার্সিতে তাকে দেখা গেছে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে।
পরে জাতীয় দলের নির্বাচক ও প্রধান নির্বাচক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। নাজমুল হাসানের বোর্ডেও তিনি প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব নেন ২০১৩ সালে। পরে ২০১৬ সালে বিতর্কিতভাবে দ্বি-স্তর বিশিষ্ট নির্বাচক কমটি গঠন করে প্রধান নির্বাচকের ক্ষমতা সীমিত করা এবং প্রধান কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে মতবিরোধসহ নানা কারণে পদত্যাগ করেন তিনি।
এরপর গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সসয়ে প্রদর্শনী ম্যাচে তাকে মিরপুরে খেলতে দেখা গেলেও বোর্ডের দায়িত্ব থেকে দূরেই ছিলেন তিনি। ৫৮ বছর বয়সী সাবেক ক্রিকেটার এবার ফিরলেন বোর্ডের শীর্ষ ব্যক্তি হিসেবে।
এ দিন সভায় উপস্থিত থাকা বিসিবি পরিচালকদের মাহবুব আনাম, কাজী ইনাম আহমেদ, সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরি, সালাহউদ্দিন চৌধুরি, খালেদ মাহমুদ, আকরাম খান, ইফতেখার আহমদ মিঠু ও ফাহিম সিনহার নাম জানা গেছে।