বর্ণিল সাজে সেজেছে মাগুরা শহর। পাঁচ দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী পূজা উৎসব শুরু হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে। আজ সোমবার ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এই উৎসব শেষ হবে আগামী শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বিজয়া দশমীর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বর্ণাঢ্য এই কাত্যায়নী উৎসবকে ঘিরে মাগুরা এখন পরিণত হয়েছে মিলনমেলায়। প্রতিবছরের মতো এবারও উৎসবে অংশ নিতে ভিড় করছেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত দর্শনার্থীরা, এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারত ও নেপাল থেকেও এসেছেন পর্যটকরা। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের মিলনমেলায় মুখরিত পুরো শহর।
দুর্গাপূজার এক মাস পর দুর্গা প্রতিমার আদলেই কাত্যায়নী প্রতিমা নির্মাণের মধ্য দিয়ে এ উৎসব পালিত হয়। যদিও দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব, তবে মাগুরায় কাত্যায়নী পূজাকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এটি এখন সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব।
ধর্মীয় শাস্ত্রমতে, শ্রীকৃষ্ণের জন্মের পূর্বে গোপীবালাবৃন্দ যমুনাতীরে শ্রীকৃষ্ণকে আরাধনা করতেন দেবী কাত্যায়নীর মাধ্যমে। সেই সময়ের আরাধনা থেকেই কাত্যায়নী পূজার উৎপত্তি, যার সময়কাল ছিল কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসজুড়ে। প্রতিমা স্থাপনের সময় দুর্গার কোলে শ্রীকৃষ্ণের ছোট্ট মূর্তি স্থাপন করা হয়—যা দেবীদুর্গার মাধ্যমে কৃষ্ণের সান্নিধ্য লাভের প্রতীক।
এ বছর মাগুরা জেলায় মোট ৯৩টি মণ্ডপে কাত্যায়নী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শহরের পারনান্দুয়ালী, নিতাই গৌর গোপাল সেবাশ্রম, নতুন বাজার সাহাপাড়া, ছানাবাবুর বটতলা, জামরুলতলা পূজামণ্ডপ ও স্মৃতিসংঘসহ প্রতিটি মণ্ডপে তৈরি হয়েছে দৃষ্টিনন্দন গেট, প্যান্ডেল ও তোরণ। সন্ধ্যা নামলেই আলোকসজ্জায় ঝলমল করে ওঠে শহরের প্রতিটি মণ্ডপ।
উৎসবকে ঘিরে বসেছে মেলা, যেখানে রয়েছে পোশাক, খেলনা, চিনামাটির সামগ্রী, মিষ্টি ও পিঠাপুলির দোকান। ভক্ত ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে ছানাবাবুর বটতলা ও আশপাশের এলাকা।
মাগুরা জেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সভাপতি কুমুদ রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, এবারের উৎসবে আবহাওয়া ও পরিবেশ ভালো থাকায় প্রতিমা, সুউচ্চ গেট, প্যান্ডেল ও অত্যাধুনিক লাইটিং দেখতে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে প্রায় ১০ লক্ষ লোকের সমাগম ঘটবে।
পূজা চলাকালীন জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ সভা করে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি র্যাবের টহল দলও কাজ করছে মাঠে। প্রতিটি মণ্ডপ এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা ও তথ্যকেন্দ্র।
প্রায় ৭০–৭৫ বছর আগে মাগুরা শহরের পারনান্দুয়ালী এলাকার সতীশ মাঝি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম কাত্যায়নী পূজা শুরু করেন। তিনি দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা সংক্ষিপ্ত করে গোষ্ঠীগতভাবে এই পূজার প্রচলন করেন, যা পরে জেলার অন্যতম বৃহৎ উৎসবে পরিণত হয়। বর্তমানে এটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে আড়ম্বরপূর্ণ কাত্যায়নী উৎসব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।