সিরাজগঞ্জে দেশি মাছের সংকট: বৈদেশিক প্রজাতির আধিপত্য সিরাজগঞ্জে দেশি মাছের প্রজাতি কমে যাওয়ার পেছনে বৈদেশিক মৎস্যের আধিপত্য একটি অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশের একটি মৎস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত অঞ্চল, বর্তমানে দেশি মাছের সংকটের মুখোমুখি। বর্ষা মৌসুমেও এখানকার নদ-নদী, খাল-বিল এবং জলাশয়গুলোতে দেশি প্রজাতির মাছ প্রায় অদৃশ্য।
স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, গত ৩০ থেকে ৩৫ বছরে অর্ধশতাধিক দেশি মাছের প্রজাতি বিলুপ্তির পথে।সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন জলাশয়ে এখন বিদেশি জাতের মাছের আধিপত্য দেখা যাচ্ছে। এই বিদেশি মাছগুলো যেমন তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, ও কার্প জাতীয় মাছ দ্রুত বংশবিস্তার করে এবং সহজেই বাজার দখল করছে।
স্থানীয় মৎস্যজীবী আবুল হোসেন বললেন, “এখন আমাদের পুকুরে দেশি মাছ পাওয়া দুষ্কর। বিদেশি মাছের চাষ বাড়ছে, আর দেশি মাছগুলো দিন দিন কমে যাচ্ছে।”স্থানীয় কৃষি ও মৎস্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশি মাছের সংকটের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
প্রথমত, জলাশয় ও নদীগুলোর দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। এছাড়া, অতিরিক্ত মাছ শিকার এবং জলাশয়ের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়াও একটি বড় কারণ।
সিরাজগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, মো. সাইফুল ইসলাম জানান, “আমরা দেশি মাছের চাষ বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের সচেতন করছি। তবে বৈদেশিক মাছের চাষ সহজলভ্য হওয়ায় কৃষকরা তাতে বেশি আগ্রহী।”এই সংকটের ফলে স্থানীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পরছে।
মৎস্যজীবীরা তাদের আয়ের উৎস হারাচ্ছেন এবং দেশি মাছের চাহিদা পূরণে বিদেশি মাছের উপর নির্ভরতা বাড়ছে।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশি মাছের প্রজাতি সংরক্ষণে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। এ জন্য জলাশয় পুনরুদ্ধার, দেশি মাছের প্রজনন বৃদ্ধি এবং সচেতনতা কর্মসূচির মাধ্যমে দেশি প্রজাতির মাছের সংরক্ষণ করা সম্ভব।
ভবিষ্যতে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা এবং স্থানীয় অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে দেশি মাছের সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। এজন্য সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। দেশের পরিবেশ ও অর্থনীতির স্বার্থে দেশি মাছের চাষ ও সংরক্ষণে মনোযোগ দেওয়া উচিত।