সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বরাদ্দ পাওয়া ঘর বিক্রির অভিযোগ উঠেছে একাধিক পরিবারের বিরুদ্ধে। মাত্র ৫০ থেকে ৯০ হাজার টাকার বিনিময়ে এসব ঘর হাতবদল হয়ে যাচ্ছে অন্যের কাছে। অনেকে নিজেরা ঘরে বসবাস না করে তালা ঝুলিয়ে রাখছেন কিংবা বিক্রির চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নের বলদীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রোকেয়া খাতুন উত্তর শ্যামপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে বরাদ্দ পাওয়া ঘর মাত্র ৫০ হাজার টাকায় সাগর মোল্লা নামের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন। একই প্রকল্পে দেওঘর গ্রামের রুমি খাতুন ৬০ হাজার টাকায় তাঁর ঘর বিক্রি করেছেন টাগড়া গ্রামের মো. আব্দুল্লাহ কাছে। আর ফারজানা খাতুন তাঁর ঘর বিক্রি করেন উত্তর শ্যামপুর গ্রামের দাউদ রহমানের কাছে ৬৩ হাজার টাকায়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি তাঁর সন্তান ছাড়া অন্য কারও কাছে ঘর হস্তান্তর করতে পারেন না। এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের সার্ভেয়ার আব্দুল মমিন মণ্ডল বলেন, ঘর বিক্রি সম্পূর্ণ অবৈধ। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, গোপনে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে বিক্রেতার স্বাক্ষর বা টিপসই নিয়ে ঘর বিক্রি সম্পন্ন করছেন কিছু ব্যক্তি।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সরেজমিনে উত্তর শ্যামপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, ফারজানা খাতুনের ঘরে এখন দাউদ রহমানের ভাই সাইফুল ইসলাম ছোট গরুর খামার চালাচ্ছেন। অন্য দুটি বিক্রি হওয়া ঘরে তালা ঝুলছে। স্থানীয়রা জানান, প্রকল্পে নির্মিত ৩৫টি ঘরের মধ্যে ৩টি ইতিমধ্যে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া অন্তত ১০ থেকে ১২ জন বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তি ঘরে থাকছেন না। তাঁদের কেউ কেউ ঢাকায় কাজ করেন, আবার কারও আগেই নিজস্ব বাড়ি ছিল, তাঁরা বরাদ্দের ঘরে ওঠেননি।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি হেলাল উদ্দিন সরকার বলেন, অনেকে গোপনে ঘর বিক্রি করেন। পরে যখন ক্রেতারা ঘরে ওঠে তখন বিষয়টি জানাজানি হয়। সামর্থ্যবান ও প্রভাবশালী লোকজন ঘর পাওয়ার পর বসবাস না করে বিক্রি করে দিচ্ছেন এটা নতুন কিছু নয়।
তাড়াশ উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পে মোট ঘর ছিল ৩৫৬টি। এর মধ্যে দেশীগ্রাম ইউনিয়নের বড় মাঝ দক্ষিণা আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৪৮টি, শ্যামপুর মৌজায় ৩৫টি, তালম ইউনিয়নের গুল্টা খ্রিষ্টান মিশনারিপাড়ায় ১৩টি ও কলেজপাড়ায় ছয়টি ঘর নির্মিত হয়েছে।
সরোজমিনে গিয়ে আরও জানা যায়, বড় মাঝ দক্ষিণা আশ্রয়ণ প্রকল্পের তেঘরী গ্রামের ফয়েজ আলী ও কর্ণঘোষ গ্রামের কৃষ্ণ দাস তাঁদের ঘর ১ লাখ টাকা করে বিক্রি করেছেন। তাঁদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে বড় মাঝ দক্ষিণার এক নারী বরাদ্দভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়ণে আরও অনেক ঘর বিক্রি হয়েছে। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখলে সত্যতা পাবেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শ্যামপুর আশ্রয়ণে ৮-১০টি, বড় মাঝ দক্ষিণায় ৭-৮টি এবং গুল্টা কলেজপাড়ার একটি ঘরে বরাদ্দপ্রাপ্ত পরিবার বসবাস করছে না। এসব ঘরে ঝুলছে তালা। তবে গুল্টা খ্রিষ্টান মিশনারিপাড়ায় ১৩টি ঘরেই বসবাস করছে বরাদ্দপ্রাপ্তরা।
শ্যামপুর প্রকল্পের বাসিন্দা মজিবর বলেন, এখানকার সাতটি টিউবওয়েলের তিনটি নষ্ট। ড্রেনগুলো অকেজো। রাস্তা কর্দমাক্ত। কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। এসব কারণে অনেকে এখানে থাকতে চান না।
এ বিষয়ে দেশীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসাক বলেন, ঘর বিক্রি কিংবা না থাকার বিষয়টি মৌখিকভাবে অনেকেই জানিয়েছেন, তবে লিখিত অভিযোগ পাইনি।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান বলেন, ঘর বিক্রির অভিযোগ পেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। এ ছাড়া অন্যান্য বিষয়ও খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।