সিরাজগঞ্জের ধানবান্দি ও হোসেনপুর এলাকায় হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত তিন দিনে অন্তত ২০০ জন এই রোগে আক্রান্ত হন। আক্রান্তদের মধ্যে অনেকে পার্শ্ববর্তী নর্থবেঙ্গল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, কেউ সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, আবার অনেকে বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আকিকুন নাহার জানান যে, ধানবান্দি ও হোসেনপুর থেকে কয়েকজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং তারা উপযুক্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা ধারণা করছেন, পৌরসভার সরবরাহিত পানি দূষিত হওয়ায় এই রোগ ছড়াচ্ছে। অন্যদিকে, স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা মনে করছেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ও দুর্বল স্যানিটেশন ব্যবস্থাই এই প্রাদুর্ভাবের কারণ হতে পারে।
নর্থবেঙ্গল জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মো. আলমগীর হোসেন জানান, গত ১৫ দিনে ১২২ জন ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবারই ১৮ জন ভর্তি হয়েছেন এবং ৫০ জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে ৭২ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। অধিকাংশ রোগী ধানবান্দি এলাকার এবং তারা সাপ্লাই পানিকে ডায়রিয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন।
সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স সোমা রানী ঘোষ বলেন, গত ১০ দিনে হাসপাতালে ১৭৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। সাধারণত দৈনিক চার-পাঁচজন রোগী ভর্তি হন, কিন্তু সম্প্রতি হঠাৎ সংখ্যা বেড়ে গেছে।
ধানবান্দির বাসিন্দারা জানান, পৌরসভার পানি সরবরাহ ব্যবস্থার পাইপলাইনে দূষণ বা ক্ষতিকর উপাদানের মিশ্রণ তাদের অসুস্থতার কারণ হতে পারে। বেসরকারি হাসপাতালের এক রোগী আলামিন হোসেন জানান, তার পরিবারের তিনজন সদস্যই পৌরসভার সাপ্লাই পানি পান করার পর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন জানান, প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি জনস্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য বিভাগে অবগত করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোছা. শারমীন খোন্দকার বলেন, ধানবান্দিতে তিন দিনে ৯০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যারা প্রাথমিকভাবে সাপ্লাই পানিকে দায়ী করেছেন।
পৌরসভার প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক গনপ্রতি রায় দাবি করেছেন যে, সরবরাহিত পানিকে পরীক্ষা করে কোন দূষণ পাওয়া যায়নি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রোকন উজ্জামান উল্লেখ করেন যে, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও ব্যবহারকারীর আচরণবিধি যথাযথ না মানায় রোগ ছড়াচ্ছে।
সিভিল সার্জন ডা. নুরুল আমীন জানান, ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের লোকজন প্রাদুর্ভাবের কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছেন এবং স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত এলাকায় চিকিৎসা ও স্যানিটেশন সচেতনতা কাজ চালাচ্ছেন।
এ অবস্থায়, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জনসাধারণকে পানির উত্স বিশুদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে এবং স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সতর্ক রয়েছে।