নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চরম জনবল সংকট, অবহেলাজনিত অবকাঠামো ধ্বংস এবং নিরাপত্তাহীন পরিবেশে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। একদিকে যেমন ডাক্তার, নার্স ও মিডওয়াইফ সংকটে বন্ধ হয়ে পড়েছে জরুরি সেবা; অন্যদিকে ভেঙে পড়া সীমানা প্রাচীর ও নিরাপত্তার অভাবে বাড়ছে চুরি, ছিনতাই ও অসামাজিক কার্যকলাপ। বারংবার সংবাদমাধ্যম গুলোতে শিরোনাম হলেও মিলছেনা কোনো দৃশ্যমান প্রতিকার।
উপজেলায় একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হওয়ায় ৫ লাখ মানুষের ভরসা এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধনের ফলে পার্শ্ববর্তী উপজেলা থেকে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে ভিড় করে এখানে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ১৭ জন চিকিৎসকের স্থলে পদ শূণ্য রয়েছে অর্ধেকেরও বেশি। যারা আছেন তাদের মধ্যে একজন আবার জেলা সদরে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। নেই কোনো গাইনী বিশেষজ্ঞ , মিডওয়াইফ আছেন কেবল একজন। ফলে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে গাইনী সেবা ও সিজারিয়ান অপারেশন। ফলে রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতেও হিমশিম খাচ্ছেন কর্তব্যরতরা।
কমপ্লেক্সেটিতে নেই জেনারেটর বা বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। ফলে লোডশেডিং চলাকালীন ভূতুড়ে অবস্থা সৃষ্টি হয় রাতে। লোডশেডিংয়ের কারণে দিনের বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ থাকে আলট্রাসনোগ্রাফি, ইকোসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেবা। গত বন্যা থেকে এক্সরে মেশিনটি হয়ে পড়েছে সম্পূর্ণ অকেজো। ফলশ্রুতিতে এক্সরে সেবা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হচ্ছে সেবা প্রত্যাশিরা। অন্যদিকে কমপ্লেক্সটির কেন্টিনের নিম্নমানের খাবার নিয়েও অভিযোগ তুলেছে ভুক্তভোগীরা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা মিলে কমপ্লেক্সের পূর্ব পাশে প্রায় ১৫০ মিটার সীমানা প্রাচীর দীর্ঘদিন ধরে ভেঙে পড়ে রয়েছে। প্রায় ৫.৩ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা কর্মী রয়েছে একজন। বয়সের ভারে যেন বিপর্যস্ত তার দেহ। ফলে সন্ধ্যার পর থেকে রাত অবধি বহিরাগতদের আনাগোনা, মাদক সেবন ও অসামাজিক কার্যকলাপ নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডাক্তারদের আবাসিক কোয়ার্টারেও চুরির ঘটনা ঘটছে। গত ৩০ জুলাই এক যুবক ডাক্তার কোয়াটারের দ্বিতীয় তলায় উঠে গ্রিল ভেঙে ঢুকে পড়লে তাকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তাছাড়া হাসপাতালে রোগী সেজে চুরি, কর্মরত কর্মীদের মোবাইল ফোন খোয়া যাওয়া এবং প্রতিনিয়ত বহিরাগতদের অবাধ চলাচলের অভিযোগও রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইসরাত জাহান বলেন, জনবল সংকট ও অবকাঠামোগত সমস্যাগুলো আমি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো সিজারিয়ান সেবা চালু করেছিলাম। কিন্তু বিশেষজ্ঞ ও মিডওয়াইফ সংকটে সেটি এখন বন্ধ। নিরাপত্তার বিষয়টিও জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে বারবার তুলেছি, কিন্তু দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন আসেনি।
আরএমও ডা. রিয়াজ উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, সীমানা প্রাচীর না থাকায় যে কেউ যেকোনো সময় প্রবেশ করতে পারে। এতে রোগী ও কর্মীদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ছে।
স্থানীয়রা দ্রুত ভাঙা সীমানা প্রাচীর সংস্কার, পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ ও নিরাপত্তা জোরদারের দাবিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।