মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় সিলেটে আরেক হাসপাতালে নেওয়া হলে এক প্রসূতির মৃত্যু ঘটে। সোমবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর তার অস্ত্রোপচার হয়। মঙ্গলবার (২৯শে অক্টোবর) সকালে প্রসূতি নারী সিলেটের একটি হাসপাতালে মারা যান।
নিহতের স্বজনদের কাছে থেকে জানা যায়, সাবিনা (২৩) মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৬ নম্বর আশীদ্রোন ইউনিয়নের রামনগর এলাকার পরিবহন শ্রমিক নুর হোসেনের স্ত্রী। তাকে সোমবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শ্রীমঙ্গল শহরের কলেজ রোডের মজুমদার নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার চালিয়ে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. নিশীত নন্দী মজুমদার সাবিনার স্বজনদের বলেন, রোগীর অবস্থা ভালো নয়। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মৌলভীবাজার অথবা সিলেট নিয়ে যেতে হবে।
নিহত সাবিনার বড় ভাই আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা রোগীকে (সাবিনা) নিয়ে শহরের কলেজ রোডের মজুমদার নার্সিং হোমে গেলে তারা কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই তাকে অটিতে (অপারেশন থিয়েটার) নিয়ে যায় এবং অপারেশন করে। অপারেশনের পর বেডে নিয়ে আসে। অপারেশনের সময় তার জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে- তা আমাদের জানানো হয়নি। ঘন্টাখানেক পরে দেখি, পুরো বেডে খালি রক্ত আর রক্ত। এ ঘটনা ডা. নিশীত মজুমদারকে জানানোর পর তিনি আমাদেরকে রক্ত সংগ্রহ করতে বলেন। আমরা এক ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে দেই। এরপর আরও এক ব্যাগ রক্ত রোগীকে দেওয়া হয়। একটু পর তৃতীয় ব্যাগ রক্ত দেওয়ার পর চিকিৎসক আমাদের বলেন, রোগীকে মৌলভীবাজার লাইফ লাইন প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সেখানে কোন কিছু বলা লাগবে না। যা বলার তিনি ফোনে বলে দিয়েছেন। গেলেই রোগীকে ভর্তি করা হবে।’
নিহতের ভাই আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে আমার বোনের লাশ নিয়ে সিলেট থেকে শ্রীমঙ্গল এসে পৌঁছেছি। বোনের লাশ জানাজার পর কবরস্থ করে আমি বিষয়টি মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবর লিখিতভাবে জানাবো এবং আইনি পদক্ষেপ নেবো।’
এ বিষয়ে হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন , ‘আমি তাৎক্ষণিক ব্লিডিং বন্ধের সব ব্যবস্থা নিই। রক্ত এনে রোগীর শরীরে দেই। এরপর আরও এক ব্যাগ রক্ত দেওয়ার পর দেখি, ব্লিডিং বন্ধ হচ্ছে না। তখন আমি রোগীর স্বজনদের বলি, তাড়াতাড়ি অন্যত্র নিয়ে যেতে হবে। ডা. এরশাদ মৌলভীবাজার লাইফ লাইন হাসপাতালের ম্যানেজারের সঙ্গে আলাপ করেন। রোগীর অপারেশনের জন্য সার্জনসহ ওটি রেডি করে রাখা হয়। রোগীর স্বজনরা রোগীকে নিয়ে মৌলভীবাজার লাইফ লাইন হাসপাতালে যাওয়ার পর ডিউটিরত চিকিৎসক ব্লিডিং হচ্ছে শুনে রোগী রাখেনি, তাকে সিলেট নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ১টার দিকে খবর পেলাম রোগীকে সিলেট নর্থ-ইস্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার সকালে তিনি দুর্ভাগ্যজনকভাবে মারা গেছেন। একজন ডাক্তার চান না কোনও রোগী মৃত্যুবরণ করুক, কোনও চালক চান না একটা ইঁদুরও গাড়িচাপা পড়ে মারা যাক। গত ৬ বছরেও আমার হাসপাতালে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। গতকাল সাবিনার ঘটনাটি আমার এখানে প্রথম। রোগীকে ভর্তির সময় রোগীর স্বজনরা যে ছয় হাজার টাকা জমা দিয়েছেন তা ফেরত দিয়ে দেবো।’