গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়ায় “সবুজ বাংলা জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক ” এ যেন এক মরণফাঁদ,
ভোগান্তি আর প্রতারণার সংমিশ্রণেই চলছে এই ডায়াগনস্টিকের চিকিৎসা নামক কার্যক্রম। বিগত সময় ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হয়ে আসছে -সবুজ বাংলা জেনারেল হাসপাতালের ভুল চিকিৎসার ফিরিস্তি।
সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া ও গোবিন্দগঞ্জ রোডে উক্ত হাসপাতালের অবস্থান।
চন্দনপাঠ গ্রামের জনৈক ডাক্তার এটি এম রাশেদুন্নবী পরিচালনা করে আসছেন এই হাসপাতালটি ।
এলাকায় কোন ভাল মানের ক্লিনিক না থাকায় এখানেই চালিয়ে আসছে ডেলিভারি সহ অস্ত্রপাচারের কার্যক্রম।
হাসপাতালের মান উন্নয়ন করতেই প্রথমত এলাকার জনসাধরণের স্বাস্থ্য সেবায় কিছুটা আন্তরিকতা দেখালেও বর্তমানে সেখানে স্বাস্থ্য সেবার নামে চলছে প্রতারনা।
হাসপাতালে সার্জন বা কোনো এ্যানেসথেসিয়া ও রেজিষ্ট্রার ডাক্তার না থাকলেও ডাঃ রাশেদুন্নবী নিজেই বিভিন্ন ডাক্তারের নাম ব্যবহার করে জটিল জটিল অপারেশন করে আসছে
এলাকার অসহায় গরীব দুঃখী মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
ভুক্তভোগী অনেকেই প্রতারনার শিকার হয়ে – প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছিল – প্রয়াত জাতীয় সংসদের মাননীয় ডেপুটি স্পিকার বরাবর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঢাকা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ লিখিত অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরেও দিয়েছেন —–
এসব দূর্নীতির ব্যাখ্যা চেয়ে ২৯-০৪-২০২৪ইং মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেস্টা করা হয় – ‘সবুজ বাংলা হসপিটালে’র পরিচালক ডাঃ রাশেদুন্নবী’র সঙ্গে । একাধিকবার মোবাইলে কল করারপর ফোন রিসিভ করেন এবং কথা হয়, বক্তব্যে তিনি প্রথমতঃ অস্বীকার ও বিদ্বেষমূলক ইঙ্গিত করে এরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পরবর্তীতে বস্তুনিষ্ঠ বাস্তবতার মূখে স্বীকারুক্তি জ্ঞাপন করেন
বিগত সময়ের ঘটনার বাস্তবতা এমনটাই–
উপজেলার বোনারপাড়া ইউনিয়নের – বাটি গ্রামের মৃতু হবিবুর রহমানের ছেলে শহিদুল ইসলামের লিখিত অভিযোগে জানা যায় , শহিদুল ইসলামের মেয়ে “স্মৃতি বেগম “প্রসবজনিত কারণে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে গত ৪ অক্টোবর-২০২৩, সকালে সবুজ বাংলা জেনারেল হাসপাতালে আসেন । হাসপাতালটির চিকিৎসক ও পরিচালক ডাক্তার রাশেদুন্নবীর পরামর্শক্রমে তাৎক্ষনিক আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছিল ।স্মৃতি বেগমের পরিবারকে জরুরী ভিত্তিতে সিজারের পরামর্শও দেওয়া হয়।
তার পরামর্শ অনুযায়ী অতি দ্রুত রোগি স্মৃতিকে সিজার করাতে বাধ্য হয়। উক্ত ক্লিনিকে কর্মরত ডাক্তার- সুমি বেগম আল্ট্রাসনোগ্রামের ডাক্তার না হয়েও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেন।
সার্জন না হয়েও স্মৃতি বেগমকে সিজার ও এ্যানাসথেসিয়া দেন জনৈক ডাক্তার । বিকালেই সিজারের মাধ্যমে জন্মে নবজাতক ছেলে সন্তান । হাসপাতালে কোন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় নবজাতক শিশুটি যথাযথ পরিচর্যার অভাবে – কয়েক ঘন্টার মদ্ধ্যে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে ।হাসপাতালে সার্বক্ষণিক কোন এমবিবিএস ডাক্তার পর্যন্ত ছিলনা এবং নেই । শারীরিক অবস্থার অবতনির এক পর্যায়ে সেদিন রাত্রি ১০ টায় গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের (অবসরপ্রাপ্ত) ডাক্তার এস.এ কবিরের বাসায় নবজাতক শিশুটিকে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসায় মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন । দ্রুত নবজাতকে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন ডাক্তার এস.এ কবির। ঐদিন রাত্রি ১১:৩০ নবজাতককে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে জরুরী বিভাগে ভর্তি করানোর ফলে প্রানে বেঁচেযায়।
এমন ঘটনায় হাসপাতালটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে সংশ্লিস্ট মহলের শুভ দৃষ্টি কামনা করেন এলাকার সচেতন মহল।
অপরাপর – বোনারপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম শিমুল তাইড় প্রামের আরিফ নাহিদের সন্তানসম্ভাবা স্ত্রী শাহনা আক্তার বন্যাকে প্রথম সন্তান ডেলিভারির জন্য মঙ্গলবার সকালে
একই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় । সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শে বেলা অনুমান ১টায় সিজারিয়ানের মাধ্যমে “বন্যার” এক কন্যা শিশুসন্তন জন্ম নেয়। নবজাতক শিশুটিকে কয়েক ঘণ্টা অক্সিজেন দিয়ে রেখেছিলেন চিকিৎসক। সদ্য জন্মানো নবজাতকের অবস্থা আশঙ্কাজনক জেনেও স্বজনদের বুঝতে দেওয়া হয়নি, দীর্ঘ সময় অক্সিজেন দিয়ে রাখার পর সন্ধ্যায় নবজাতক শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেয় হাসপাতাল কতৃপক্ষ এবং কৌশলে শিশুটিকে তুলে দেওয়া হয় স্বজনদের হাতে। স্বজনরা শিশুকে মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে উত্তেজিত হয়ে হাসপাতাল স্টাফদের সাথে বাগবিতন্ডায় জরিয়েপরে । স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে রাতেই শাহনা আক্তার বন্যার স্বামী বাদী হয়ে সাঘাটা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সন্তানের মৃত্যুর সংবাদে শাহনা আক্তার বন্যা হাসপাতালে অজ্ঞান অবস্থায় চিতিৎসাধীন ছিল।
এ বিষয়ে একটি অভিযোগ করা হয় থানায়, অভিযোগের কথা স্বীকার করেছেন সাঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ রাকিব হাসান।
গত ১৮ এপ্রিল-২০২৪ তারিখে সিজার করতে আশা জনৈক প্রসূতি নাজমার মূত্রনালী ভুলবশত কেটেফেলেছেন উক্ত হাসপাতালের এক চিকিৎসক।
এনিয়ে আবারও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় এবং সাঘাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে থানা সূত্রে জানাযায়। ঘটনা শেষ হতে না হতেই গত দুই দিন আগে ‘আরজিনা আক্তার’ নামের এক নারীর সিজার করার পর সফল ভাবে সন্তান ডেলিভারি হলেও ঐ নারীর মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর মাঝে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়। ভুক্তভোগীর পরিবারের সাথে কথা হলে মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে ভয়পাচ্ছে বলে তারা জানায়
। চাঞ্চল্যকর ঘটনার দুই দিন পর উক্ত হাসপাতালের চিকিৎসক রায়হান সোবহান ও সাইফুল ইসলাম’ মৃত্যু হওয়া নারীর ভাইয়ের বাড়িতে নবজাতক শিশুটিকে দেখতে যায়। সে সময় রুগী মৃত্যুর কারন জানতে চাইলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রায়হান সোবাহান ও সাইফুল ইসলাম জানান, কি কারণে মারা গিয়েছে আমরাও বুঝে উঠতে পারছি না।
এলাকার সর্বস্তরের জনগণ এমন মরণফাঁদের হাসপাতালের কার্যক্রমকে ধিক্কার দিয়ে গত ২৬ এপ্রিল ২০২৪ইং শুক্রবার বিকেলে সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের রেলওয়ে স্টেশন প্রাঙ্গণে এক বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেন। মানববন্ধনে অংশগ্রহনকারী সকল বক্তরা হাসপাতালের সকল কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।